Press "Enter" to skip to content

আজ সত্যজিৎ রায় এর ‘হীরক রাজার দেশে’র চলচ্চিত্র মুক্তি দিবস….।

Spread the love

বাবলু ভট্টাচার্য : ১৯৮০ সালে আজকের দিনে (১৯ ডিসেম্বর) সত্যজিৎ রায় এর ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছিল।

গুপী গাইন আর বাঘা বাইন’কে নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি পছন্দ নয় এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার।

এই সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পরে আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি রিভিউ লেখা হয়েছিল। তবে মজার ব্যাপার হলো, এই রিভিউটি লেখা হয়েছিল কবিতার মতো ছন্দে ছন্দে, ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমার ডায়লগের মতো মিলিয়ে মিলিয়ে… কে লিখেছিল তা কিন্তু জানি না :

হীরক রাজার দেশে ফিল্ম দেখে আদ্যোপান্ত,
সত্যি কথা খুলেই বলি লেগেছে দুরন্ত।
মিল মিলিয়ে কথাবার্তা, ছড়ার ছড়াছড়ি,
গানের উপর গান জমেছে, উসুল গাটঁ এর কড়ি।
যেমনি সুর তেমনি কথা, রাগের কি বাহার,
রবি বাবুর পরেই মানিক শ্রেষ্ঠ সুরকার।
উপেন বাবুর নাতি তিনি, তাতাবাবুর ছেলে
হীরার সঙ্গে মানিক জ্বলে, ক’টি তে এক মেলে।
গুপীবাঘার পরের অংশ, সেই বাঘা সেই গুপি,
সত্যজিতের মাথায় উঠলো আর একখানা টুপি।
শুন্ডি রাজার ডাবল জামাই, ঘুমায় ও খায় দায়,
হারাম বলে আরাম ছেড়ে বাইরে যেতে চায়।
ভুত বাবাজির বরে বেড়ায় যখন যেথায় মন,
কখনো সাগর, কখনো পাহাড়, কখনো গভীর বন।
ঢোল বাজিয়ে, গান শুনিয়ে নানা রকম বেশে,
হঠাৎ এসে হাজির হলো হীরক রাজার দেশে।
হীরক রাজা জবর রাজা, করেন মগজ ধোলাই,
বেয়াদপ এর জন্য রয়েছে ধোলাই ঘরটা খোলাই।
মুখে রাজার মধু ঝরে, কাজে দেখান কলা
মজুর মরে, চাষী মরে, মরে গানের গলা।
মন্ত্রীরা সব কলের পুতুল, ঘাড়টা নেড়েই খুশি,
রাজার জন্য কোর্মা-পোলাও, প্রজার জন্য ঘুষি।
বই পড়িয়ে স্কুল ঘুরিয়ে মেটান মনের সাধ
উদয়ন নাম গুরুমশাই জানান প্রতিবাদ।
বাড়ি ছেড়ে পালান তিনি পাহাড় জঙ্গলে,
মজুর চাষী খেপিয়ে বেড়ান, খেপান ছাত্র দলে।
উদয়ন এর সঙ্গে তখন দেখা গুপীবাঘার,
তিন জনেতে শলা করে রাজায় করে কাবার।
হরেক রকম ফন্দি ফিকির শেষে ওদের জিত
নিজের মূর্তি নিজে ভাঙ্গেন, রাজামশাই চিৎ।
রাজ্যি জুড়ে বাদ্যি বাজে, আর থাকেনা ভয়,
রাজা প্রজা সব একাকার, গুপীবাঘার জয়।
তপেন রবি দারুণ জুটি, গানে অনুপ বাবু,
গলায় ঢোলে মাত করেছে, আমরা সবাই কাবু।
একটি গানে অমর পাল এর গলা প্রশংসার,
সেই গানে বেশ ঠোট মেলান রবিন মজুমদার।
যেনো কসাই রাজা মশাই, দত্তজা উৎপল,
অভিনয়ের তুলনা নেই, বাক্য অনর্গল।
শান্ত্রি-মন্ত্রী বিদুষক আর কবি গনৎকার,
সাজ পোষাকে চলে ফিরে বড়ই চমৎকার।
সেটের বাহাদুরি আছে, দারুণ রঙ এর সেন্স,
স্বপ্নপুরী হাজির করে সৌমেন্দুর লেন্স।
রাজা বাদশা নিমন্ত্রিতের মেকআপ দেখার মতো,
যেমন নাগরা তেমন পাগড়ি, গোফ এর কায়দা যতো।
সম্পাদনা ফাস্টোকেলাস, নদীর মতো গতি,
শব্দ গ্রহণ নিচুমানের হয়নি কো এক রতি।
তোষাখানার ছবি আনার দৃশ্যে বাজিমাত,
বাঘের সঙ্গে চোখের লড়াই, ভয়ে আটকায় বাত।
খুব স্বাভাবিক এসে গেছে হিন্দু মুসলমান,
বাঙালি যে কেবল হিন্দু সেই তত্ত্ব খান খান।
ফ্যান্টাসি আর রিয়েলিটি মিলেছে এক ঠায়,
টায়ে টায়ে মিল্লো কিনা সেটাই দেখা চাই।
গুরু মশাই গুরুতরো রামগরুর এর ছানা,
সৌমিত্রকে দেখতে পেলেই ফ্যান্টাসি হয় কানা।
বিজ্ঞানী আর শুন্ডি একই ব্যক্তি কেন?
ফেলুদার সেই জটায়ুকে দেখা গেল যেনো!!
এত বড় রাজা কেন মাটির মূর্তি গড়ে?
টান মারলে পায়ে ফাটল, গুলতিতে নাক পড়ে!!
গুপীবাঘা দরবারে যেই ঢুকলো কপাল ঠুকে,
তখন কেন থামলো ছড়া হীরক রাজার মুখে?
খুজলে পরে আরও দু-চার ধরতে পারি খুত,
এইতো যেমন কবির বচন হয়নি তেমন জুত।
তবে এসব ছোট্ট একটি, তুচ্ছ সুনিশ্চয়,
ভালোর সংখ্যা একানব্বই, মন্দের সংখ্যা দশ কি নয়।
মগজ ধোলাই, বস্তি সাফাই, রাজার ভেড়ার পাল,
খুঁজতে গেলে ইচ্ছে মতোন পাবেন প্যারালাল।
কেউ বলবেন ইমার্জেন্সি কিংবা কম্যুনিস্টি,
স্ট্যালিন, আমিন নয় হিটলার– নামের লম্বা লিস্টি।
কিন্তু ওসব গৌন ব্যাপার, মৌন থাকাই শ্রেয়,
হাজার হাজার খাবার আছে, চর্ব চোষ্য পেয়।
ওসব হলো তাদেরই কাজ, ছিদ্র খোঁজেন যারা,
সত্য ও কাল আটকে রেখে রসকে টিপে মারা।
বরং আমি ঠিক করেছি কাটতে যাবো ফিতে,
সাত হপ্তা পুর্ণ হলো হীরক জয়ন্তী-তে।

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.