মধুমিতা শাস্ত্রী : ৫, সেপ্টেম্বর, ২০২০। আজ ৫ই সেপ্টেম্বর। সারা ভারতব্যাপী জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের আজ শিক্ষক দিবস। শিক্ষক এমন একজন ব্যক্তি যাঁর স্থান আমাদের হৃদয়ের সর্বোচ্চ স্থানে। আমাদের জীবনে চলার পথে, কর্মজীবনে, চরিত্র গঠনে, জীবনে লক্ষ্য স্থির করতে শিক্ষকদের অবদান সর্বত্র। শিক্ষকরাই সমাজের মেরুদণ্ড। শিক্ষকরাই পারেন সমাজকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে। শিক্ষকতা এমন একটা পেশা যা সমস্ত পেশার মানুষকে তৈরি করে। একটা শিশু জন্মের পরে সমাজে বড় হয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে তিনজন মানুষের অবদান থাকে। এই তিন জন হলেন মা,বাবা ও শিক্ষক। আমরা পিতা-মাতার জন্য এই পৃথিবীর আলো দেখতে পাই আর জ্ঞানের আলো দেখতে পাই শিক্ষকদের দ্বারা। শিশুকাল থেকে একটু একটু করে শিক্ষার আলো জ্বালেন আমাদের মধ্যে।
এরিস্টটল বলেছেন -” শিক্ষার শেকড়ের স্বাদ তেতো হলেও এর ফল মিষ্টি।”
ইতিহাসবিদ হেনরি এডামস বলেছেন -“একজন শিক্ষক সামগ্রিক ভাবে প্রভাব ফেলেন, কেউ বলতে পারবে না তার প্রভাব কোথায় গিয়ে শেষ হয়।”
ইংরেজ কবি শেলি বলেছেন -” আমরা যতই অধ্যায়ন করি ততই আমাদের অজ্ঞানতাকে আবিষ্কার করি।”
ভারতবর্ষে সর্বপল্লী ডঃ রাধা কৃষ্ণনের জন্মদিন উপলক্ষে সমস্ত শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে পালিত হয় শিক্ষক দিবস। তিনি ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ,দার্শনিক ও অধ্যাপক। তিনি জন্মগ্রহণ করেন তামিলনাড়ুর তিরুট্টানিতে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে। তিনি ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তাঁর গুণমুগ্ধ ছাত্রছাত্রীরা তাঁর জন্মদিনটা বিশেষভাবে উদযাপন করার কথা বললে তিনি বলেন, – “জন্মদিন উদযাপন না করে সেই দিনটা যদি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়, তাহলে আমি কৃতজ্ঞ থাকব।” সেই থেকে ৫ই সেপ্টেম্বর ভারতে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। ডঃ রাধা কৃষ্ণন ছাত্র ছাত্রীদের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন। মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার উদ্দেশ্যে যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নিচ্ছেন অধ্যাপক রাধাকৃষ্ণন, তখন তাঁর ছাত্র ছাত্রীরা ফুল সজ্জিত গাড়ির ব্যবস্থা করে তাঁকে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিল। ডঃ রাধা কৃষ্ণন একাধারে রাজনীতিবিদ, দার্শনিক ও অধ্যাপক। এই শান্ত মানুষটি ছাত্রজীবনে অতি মেধাবী ছিলেন। বিশ্বের দরবারে তিনি অতি জনপ্রিয় দার্শনিক অধ্যাপক হিসাবেও পরিচিত ছিলেন। ১৯৫৪ সালে ভারতরত্ন উপাধি পান। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তথা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। তাঁর পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না। তাই দর্শন তাঁর পছন্দের বিষয় না হলেও দূর সম্পর্কের এক দাদা সেই সময় দর্শন নিয়ে স্নাতক পাস করেন। তিনি সেই দর্শনের বইগুলি পেয়ে দর্শন নিয়ে পড়তে শুরু করেন।
একসময় শিক্ষার্থী ও শিক্ষাকের সম্পর্ক ছিল পিতা-মাতা ও সন্তানের মতো। ভুল করলে তিনি বকবেন এর বিপক্ষে কোনও প্রশ্নই আসেনি কখনও। যদিও সেই মধুর সম্পর্ক আজ সর্বত্র নেই। আশা করবো ভবিষ্যতে সেই দিন আবার ফিরে আসবে। এই আশা নিয়ে পৃথিবীর সমস্ত শিক্ষকদিগের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
Be First to Comment