Press "Enter" to skip to content

আজ থেকে থিয়েটার হল খোলার অনুমতি মিলল…..।

Spread the love

সংগীতা চৌধুরী : কলকাতা, ১৬ আগস্ট ২০২১। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এবার থিয়েটার হল খোলার অনুমতি দিল রাজ‍্য সরকার। তবে সিনেমা হলের মতো থিয়েটার হল ও ৫০% দর্শক নিয়ে খোলা যাবে। সিনেমা হল খোলার অনুমতি কিছুদিন আগেই মিলেছিল, কিন্তু থিয়েটার হল খোলা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। দীর্ঘ সময় কাজ হারিয়ে সঙ্কটে পড়েন নাট‍কের নেপথ্য কর্মীরা। তাই তাদের মধ্যে থেকে অনেক কর্মীদের অন্য পেশার দিকে ঝুঁকতে হয় সংসার চালানোর তাগিদে । এবার সরকারের এই ঘোষণায় কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন তারা। শিল্পীদের চোখে মুখেও খুশির রেখা। তবে এই খুশি কতদিন স্থায়ী হবে সেটা সকলেরই অজানা। কারন সামনেই কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়েরও আশঙ্কা রয়েছে , তাই সেই কারণে শিল্পী ও কলা কুশলীরা সকলেই উদ্বিগ্ন। মাত্র ক’দিন আগেই কিছু অভিনেতার সঙ্গে কথা বলার সময় সেই চিন্তার ছাপ স্পষ্ট লক্ষ্য করা গেল।

যেমন – অভিনেতা কৌশিক সেন বলেন, ” গত বছরও দীর্ঘ সময় থিয়েটার হলগুলো বন্ধ থাকার পর পুজোর পর থেকে অল্প বিস্তর চালু হলেও, ডিসেম্বরের শুরু থেকে এপ্রিল পর্যন্ত অনেক কাজ হয়েছে। তারপরই সব বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম বার লকডাউনের সময়ই অনেকগুলো সংগঠন তৈরি হয় যারা থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত টেকনিশিয়ান্সদের নানা ভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করে। আমি নিজেই ‘সৌভ্রাতৃত্ব’ নামে একটি গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। আবার অনির্বাণ ও ঋতব্রত এরা একটা আলাদা গ্রুপ করেছিল। ব্রাত্য বসুরাও কিছু চেষ্টা করেছেন। সরকার থেকে সামান্য কিছু করা হয়েছিল। আমরা যেটা করেছিলাম তাতে এখনও আমাদের ফান্ডে টাকা আছে , তাই বর্তমান পরিস্থিতিতেও সাহায্য করার চেষ্টা করছি। যেমন- মাসে দেড়শো – দুশো জন টেকনিশিয়ান্সকে মান্থলি কিছু টাকা দেওয়া হয়। তাছাড়া এককালীন টাকাও দেওয়া হয়। কারো অপারেশন বা অন্য বিশেষ কোন কাজে প্রায় লাখ টাকার কাছাকাছিও আমরা সাহায্য করেছি। এমনকি কারো কারো জন্য মাসে চাল – ডালেরও ব‍্যবস্থা করা হয়েছে কিছুটা সময় পর্যন্ত। তবে যত চেষ্টাই করা হোক না কেন , এগুলো খুবই সামান্য বলা যায় । এমন নয় যে এটা দিয়ে তারা দুবছর টেনে নিতে পারবে। তাই যতদিন না কাজ পুরোদমে চালু হয়, ততদিন পরিস্থিতি খুবই সঙ্কটজনক। কারন সামনেই আবার তৃতীয় ঢেউয়েরও আশঙ্কা রয়েছে।

এখানে আর একটা ব‍্যাপারেও বলতে হচ্ছে যে, আমরা যারা থিয়েটারে অভিনয় করি আমরা অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত। আমি যেমন পেশাদার অভিনেতা। কেউ হয়তো কোন অফিসে চাকরি করেন , কেউ বা শিক্ষক , প্রচুর ছেলে – মেয়ে আছে যারা সিরিয়ালে অভিনয় করে। তারা একরকম ভাবে চালিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু যারা শুধুমাত্র থিয়েটারের টেকনিশিয়ান্স , তারা যেমন শো -য়ে টাকা পায় আমরা সেটা পাই না। তাই থিয়েটার বন্ধ হয়ে যাওয়াতে তারা অনেক বেশি বিপদগ্রস্ত। তবে আগের বছর যে ভাবে সাহায্য করা গেছে এবছর ততটা করা যায় নি। কারন হঠাৎ করে আবার ও বিপর্যয় আসবে সেটা কেউ ভাবতে পারে নি। আমরা অনলাইন অনুষ্ঠান করে যতটা সাহায্য করা যায় করেছি। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়েই আমাদের চলতে হবে।”

 

অভিনেতা অরিন্দম গাঙ্গুলীর মতে, ” নাট‍্য জগত ,সঙ্গীত জগত এবং শিক্ষা জগত – এই তিনটে ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই কোভিড সংক্রমণের ফলে। নাটকের যারা নেপথ্য কর্মী তাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। যারা একসময় মঞ্চ সাজিয়েছেন বা মঞ্চের আলোক সজ্জার দায়িত্বে ছিলেন বা কাউন্টারে বসে টিকিটের দায়িত্ব সামলেছেন তাদের অনেকেই আজ পেশা বদল করে সব্জি বিক্রি বা মাছও বিক্রি করছেন পেটের তাগিদে। বিভিন্ন স‌ংগঠন থেকে আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে , কিন্তু সেটা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। আমিও ‘ সৌভ্রাতৃত্ব ‘ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত, সেখান থেকেও নানা ভাবে সাহায্য করা হয়। তাই থিয়েটার হলগুলো পুনরায় চালু হলে এই সব মানুষেরা তাদের পুরনো পেশায় ফিরে আসতে পারবেন। তবে এই অস্বাভাবিকতা পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত সঙ্কটমুক্ত এ কথা বলা যায় না। “

অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদারের কথায়, ” থিয়েটারের দু – একটা প্রাইভেট হল আগেই খুলেছে , এবার সরকারি হলগুলোও খুলবে। ধীরে ধীরে কাজ শুরু হবে, আগের বার লকডাউনের পরও যেমন হয়েছিল। অতিমারি পরিস্থিতিতে সংক্রমণের প্রকোপ বেশি হলে বন্ধ তো হবেই। তাই আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে সবার পাশে থাকার চেষ্টা করেছি সেই সঙ্কটকালীন সময়ে। কিছু কিছু রসিক জন যারা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত নন তারাও পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। সেটা যদিও খুব যৎসামান্য, তা-ও তারা চেষ্টা করেছেন বলেই আজও সকলে কোন রকম ভাবে চালিয়ে যেতে পারছে। বিশেষতঃ কলাকুশলী এবং শিক্ষানবীশ অভিনেতারা। অন্যান্য কাজের সঙ্গে যারা জড়িত বা আমাদের মতো মানুষেরা তারা অন‍্যান‍্য মাধ‍্যমেও কাজ করেন বলে সামলে নিতে পারছেন । অনেকের খুবই অসুবিধা হচ্ছে। এবার আশা করা যাচ্ছে এই পরিস্থিতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা যাবে। যদিও সামনেই আবার একটা সংক্রমণের ঢেউয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ”

তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা থাকলেও সাম্প্রতিক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে যখন সব কিছুই নিউ নর্মালে চলছে তখন নাট‍্য জগতও পঞ্চাশ শতাংশ দর্শক নিয়েই আবার স্বমহিমায় ফিরবে আশা করা যায়।

ছবি – গুগুল থেকে প্রাপ্ত।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.