Press "Enter" to skip to content

আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গায়ক, লিড-গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার ও প্লেব্যাক শিল্পী…….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ আইয়ুব বাচ্চু

বাবলু ভট্টাচার্য : তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, লিড-গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার ও প্লেব্যাক শিল্পী। এলআরবি ব্যান্ড দলের লিড গিটারিস্ট এবং ভোকাল আইয়ূব বাচ্চু বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের একজন।

কিশোর বয়স থেকেই স্বপ্ন বুনছিলেন সংগীতের জাদুকর শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। পরিবারের তেমন কেউ গানের সঙ্গে না থাকলেও শৈশব থেকেই গানের প্রতি তার ঝোঁক ছিল।

আধুনিক-লোকগীতি ও ক্লাসিক্যালের পাশাপাশি শুনতেন প্রচুর ওয়েস্টার্ন গান। ব্যান্ড কিংবা গিটার- দুটোতেই তিনি ছিলেন কিংবদন্তি। তাকে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীত এগিয়ে নেয়ার অন্যতম অগ্রপথিক।

বাচ্চু মানেই উন্মাতাল ভক্তে পরিপূর্ণ গ্যালারি। অথচ মাত্র ৫৬ বছর বয়সেই সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন রূপালি গিটার, মায়াবি সকালের মায়া। দেশিয় ব্যান্ড সংগীতের তিনি ছিলেন মধ্যমণি।

এ রক লিজেন্ডের গড়ে তোলা ব্যান্ড ‘এলআরবি’ পথচলার পার করেছে ২৭ বছর। শ্রোতাদের দিয়েছেন তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গান। তার জনপ্রিয় গান রূপালি গিটার ফেলে সত্যি চলে গেলেন দূরের বহুদূরে। সুখের পৃথিবীতে তাকে আর করতে হল না সুখের অভিনয়।

আইয়ুব বাচ্চু পরিচিত নাম হলেও তার পুরো নাম আইয়ুব বাচ্চু রবিন, ‘এবি’ নামেও বেশ পরিচিত। চট্টগ্রামে জন্ম। সেখানেই কেটেছে কৈশোর আর তারুণ্যের দিনগুলো। তার কৈশোর জীবনের শুরুর দিকে সে বিভিন্ন ব্রিটিশ এবং আমেরিকান রক ব্যান্ডের গান শোনা শুরু করে।

১৯৭৫ সালে তাকে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে এসএসসি পাশ করেন। চট্টগ্রামে কলেজ জীবনে সহপাঠী বন্ধুদের নিয়ে তিনি একটি ব্যান্ডদল গড়ে তোলেন। এর নাম ছিল ‘গোল্ডেন বয়েজ’। পরে নাম বদলে করা হয় ‘আগলি বয়েজ’। সেই ব্যান্ডের গায়ক ছিল কুমার বিশ্বজিৎ এবং বাচ্চু ছিল গিটারিস্ট। সেই সময়ে তারা মূলত পটিয়ায় বিভিন্ন বিবাহ অনুষ্ঠানে এবং শহরের বিভিন্ন ক্লাবে গান করতো।

আইয়ুব বাচ্চুর সংগীত জগতে যাত্রা শুরু হয় ফিলিংস ব্যান্ডের সঙ্গে ১৯৭৮ সালে। তার কণ্ঠ দেয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’। এরপর যোগদেন সোলসে। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালে তিনি সোলস ব্যান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম ‘রক্তগোলাপ’ নামে একক অ্যালবাম প্রকাশ করেন। অ্যালবামটি তেমন সাফল্য না পেলেও সফলতার শুরু তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’ দিয়ে ১৯৮৮ সালে ।

১৯৯০ এর দশকের শেষদিকে বাচ্চু সোলস থেকে বের হয়ে আসার পর ১৯৯১ সালে তিনি ঢাকায় আসেন। তিনি ‘ইয়েলো রিভার ব্যান্ড’ নামের একটি ব্যান্ড গঠন করেন। এর ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল এস আই টুটুল (কীবোর্ডস), সাইদুল হাসান স্বপন (বেজ গিটার) এবং হাবিব আনোয়ার জয় (ড্রামস) নিয়ে যাত্রা শুরু করেন নিজের ব্যান্ড দলের।

১৯৯১ সালের মাঝামাঝি সময়ে তারা ভারতে অনুষ্ঠান করতে গেলে তাদের ভুলে ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’ নামে পরিচিত করানো হয়। নামটি বাচ্চু পছন্দ করে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে তার ব্যান্ড নামকরণ করেন। ১৯৯১ সালের এপ্রিল মাসে, এলআরবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের প্রথম কনসার্টটি করে।

১৯৯২ সালের জানুয়ারী মাসে বাংলাদেশে প্রথম ডাবল অ্যালবাম: ‘এলআরবি ১’ এবং ‘এলআরবি ২’ প্রকাশ করেছিল। ব্যান্ডটির তৃতীয় স্টুডিও অ্যালবাম ‘সুখ’, জুনে মুক্তি পায় এবং এটি বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ রক অ্যালবামগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। এতে ‘চলো বদলে যাই’ গানটি ছিল যা বাচ্চুর সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ হিসাবে বিবেচিত।

২০০৯ সালে তার একক অ্যালবাম ‘বলিনি কখনো’ প্রকাশিত। ২০১১ সালে এলআরবি ব্যান্ড থেকে বের করেন ব্যান্ড অ্যালবাম ‘যুদ্ধ’। ছয় বছর পর তার পরবর্তী একক অ্যালবাম ‘জীবনের গল্প’ (২০১৫) বাজারে আসে। এই অ্যালবামে রয়েছে ১০টি গান।

তার সেরা গানগুলো নিয়ে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রেও গেয়েছেন। যেখানে তার ‘আম্মাজান’ গানটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলোর একটি ধরা হয়।

ব্যান্ড জগতের সেরা ভোকালিস্ট হলেও সব ছাপিয়ে আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন গিটারের জাদুকর। তিনি সবসময় বলতেন, গিটার আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা। গিটারের জন্যই ঘর ছেড়েছি।

১৮ অক্টোবর ২০১৮, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন আইয়ুব বাচ্চু।

আইয়ুব বাচ্চু ১৯৬২ সালের আজকের দিনে (১৬ আগস্ট) চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

More from EntertainmentMore posts in Entertainment »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.