শীর্ষেন্দু সিংহ রায়, (আইনজীবী – কলকাতা হাইকোর্ট).: কলকাতা, ৪ জুলাই, ২০২১। যাঁর কাছে অনন্য হতে শেখা যায়, সকলকে সমান ভাবে দেখার কথা ভাবতে শেখা যায়, মানুষ হতে শেখা যায়, তিনি কি শুধুমাত্রই আইনজীবী ? না কি আরো অনেক বড় কিছু? এক এক সময় কিছুটা ভয় পেয়েও যাঁর কাছে সবথেকে আগে ছুটে যাওয়া যেতো, শ্রদ্ধাবনত হয়েও যাঁর সাথে কথা বলা যেতো, যাঁর শাসন আশীর্বাদের মতো বর্ষিত হতো তাঁকে এক সাধারণ আইনজীবীর গন্ডিতে আবদ্ধ রাখা উচিত নয়। উত্তমদা তুমিও চিরকালীনই এই গন্ডির বাইরে ছিলে, ভবিষ্যতেও থাকবে। না থেকেও সঙ্গে চলা প্রতিদিনই এমন প্রভাব উত্তম মজুমদার ছাড়া আর কেই বা হতে পারে। ওনার উজ্জ্বলময় উপস্থিতির কোনো বিকল্প ও উত্তরাধিকার থাকে না, এটাই অনন্যতা। মানুষটির ভিতরে সকল আইনজীবীর প্রতি যে স্নেহ আন্তরিকতার এই মেলবন্ধন এই যুগলবন্দী কাউকে দেখিনি। যাঁর সাথেই মিশতেন যিনিই দেখতেন সকলেই প্রত্যেক বছরের প্রতিটি ছেলে মেয়ে মনে করতো দাদা আমার সবচেয়ের কাছের। প্রত্যেক মানুষ বলতো আপনি আপনার চেয়েও আপন হলেন, সব কিছুর ভালোর সমঝদারি ওনার ধমনীতে।
দেওয়াল ঘড়ির দোদুল্যমান পেন্ডুলাম জানান দেয় ক্রমাগতই যে সময়কে ধরে রাখা যায় না, সে আপন নিয়মে কালের অতলে পৌঁছে চিরবিশ্রাম নেয়। কিন্তু কখনো কখনো সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলিকে খুঁজে নিয়ে মনও তো চায় তার কাছে বিশ্রাম নিতে। আজ তেমনিই একদিন, গতকাল বেলাশেষে রবি যখন অস্ত চলে গেছে আস্তে আস্তে অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে চারিদিক ঠিক তখনই সেই মর্মান্তিক খবর দাদা নেই। পরে বসে থাকতে থাকতে নিস্তব্ধ রাতে স্মৃতির সরণীতে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে কালো আকাশের একঝাঁক তারা। রবির আলোয় আলোকিত সেই তারার ঝাঁক মনে প্রশ্ন জাগায়, মানুষ তো অস্ত যায়, কিন্তু তার আলো কি নিভে যায় চিরতরে? সেই আলোয় আলোকিত হয়ে একঝাঁক তারা কি দিকভ্রষ্ট পথিককে পথ দেখায় না? রাতের সেই গভীর উপলব্ধি নিমেষের মধ্যে সংশোধন করে দেয় মনের পুরোনো ভুল, নতুন করে মনে হয় হারিয়ে যাওয়া রবির আলো হারায় না কখনোই। সে দিনেও থাকে রাতেও থাকে, এটাই তো পরমতম পাওয়া।
তোমার উজ্জ্বল অমলিন হাসির অভাব অনুভূত হচ্ছে প্রতি মুহূর্তেই তুমি তো দাদা এমনই ছিলে, যার অনুপস্থিতিতে অভাব অনুভূত হবে ক্ষণে ক্ষণে। আর এই অনুভবেই লুকিয়ে থাকবে তোমার জীবনের সার্থকতা । উত্তম দা তোমার এই মহাজীবন সময় -কাল নির্বিশেষে স্পর্শ করে গেছে সকলকে। আমাদের সারা রাজ্যের আইনজীবীদের কাছে তুমি এক আদর্শ দাদা কারো কাছে ভাই কারো কাছে শুধুই উত্তম কারো কাছে উত্তম স্যার। কোর্টের বা আইনজীবীদের সার্বিক উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, উত্তমদার জীবন ছিলো যেকোনো আইনজীবীর জন্য নিবেদিত প্রাণ। দাদা তুমি রাজনীতির আঙিনায় সারাজীবন এক দলের মতাদর্শে থেকে দলবদলুদের সঙ্গে গা না ভাসিয়ে যখন যে কেউ আইনজীবী তোমার কাছে গেছে তার কোনো কিছু সমস্যা নিয়ে বা কোনো পরামর্শ নিতে তুমি কোনো দল না দেখে তার জন্য যথাসাধ্য করেছো।
আজ সব মনে পড়া কথা মনে রাখার সেই দিনগুলি বলেই যেতে মন চাইছে যতই লিখি মনে হয়ছে এতো কিছুই নয়, আপনি হচ্ছেন সেই সম্প্রদায়ের মানুষ যাঁর অন্তরে ক্ষমা এক প্রবাহমান সত্য। আমাদের সকলেরই এই যে পথের এই দেখা জীবনের পথেই শেষ হয়, তবুও হৃদয় মোর ভাবে সঞ্চয় যেন কিছু রবে। উত্তমদা তুমি একজন হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা, তুমি ডেকেছো সবাই হাজির তুমি একজন অবিনশ্বর সত্ত্বা।
তথ্য সহায়তা : :– মোল্লা জসিমউদ্দিন।
Be First to Comment