Press "Enter" to skip to content

অমৃতা ছিলেন পুরোপুরি প্রথাবিরোধী একজন শিল্পী। তাঁর ন্যুড পেইন্টিঙের কানায় কানায় পূর্ণ আছে যৌনতা আর জীবনের বর্ণছটা….।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ অ মৃ তা শে র গি ল

‘ভেদি মরুপথ গিরি পর্বত
যারা এসেছিল সবে
তারা মোর মাঝে সবাই বিরাজে
কেহ নহে নহে দূর
আমার শোণিতে রয়েছে ধ্বনিতে
তার বিচিত্র সুর।’

—— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বাবলু ভট্টাচার্য : প্রাচীনকাল থেকে রেনেসাঁ বা চিত্রকলায় দেবদেবী বা মহান নারীপুরুষের যত নি-সুতো ছবি আঁকা হয়েছে সবই ন্যুড চিত্রকলার অংশ। আর এই ন্যুড চিত্রকলায় নিজেকে স্বমহিমায় ও আপন রূপে যিনি সারা পৃথিবীকে পরিচিত করিয়েছেন উপমহাদেশীয় চিত্রকলায়, তিনি অমৃতা শেরগিল।

ভারতীয় তথা প্রাচ্যের চিত্রকলাকে আলোড়িত ও আলোকিত করে তোলা এই শক্তিমান নারীশিল্পীকে নিয়ে যেমন রহস্যময়তা আছে তেমনি আছে তাঁর বৈচিত্র্যপূর্ণ রঙ ও তুলির নিজস্ব ছাঁচে ভেঙে ফেলা প্রচলিত নিয়ম কানুন- সে ব্যক্তিগত বা শিল্পী উভয় জীবনেই।

ভারতসহ হাঙ্গেরি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, নরওয়ে, জার্মানি প্রভৃতি দেশের সেরা আর্ট গ্যালারিগুলোতে আছে অমৃতার অসংখ্য মাস্টারপিস। এর মাঝে সবচেয়ে বেশি কাজ আছে দিল্লীর ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্ট এবং ইংল্যান্ডের টেট মিউজিয়ামের গ্যালারিতে।

অমৃতার মা ছিলেন হাঙ্গেরিয়ান ইহুদী আর বাবা ছিলেন ভারতীয় শিখ। মা মেরি আর বাবা উমরাও সিংয়ের দুইসন্তান অমৃতারা ছিলেন দুই বোন- অমৃতা আর ইন্দিরা, লেখাপড়া করেছেন বিদেশে। জন্মের পর থেকে বেড়ে উঠেছেন ভারতের বাইরে, কিন্তু অমৃতার আঁকা ছবি প্রমাণ করে যে নিজেকে তিনি কতটা ভারতীয় ভাবতেন।

১৯২১ সালে শেরগিল পরিবার চলে আসে ভারতের শিমলায়। অমৃতা সেখানের সামার হিলে বেহালা আর পিয়ানো দুটিই শেখেন সমানতালে, এমনকি শিমলার গেটি থিয়েটারে কনসার্ট শিল্পী হিসেবেও নিয়োগ পান। আর সেইসঙ্গে চলে ছবি আঁকার শিক্ষা। আট বছর বয়সেই তিনি আর্ট কম্পিটিশানে অংশ নেয়া শুরু করেন।

১৯২৪ সালে মায়ের সাথে চলে আসেন ইতালির ফ্লোরেন্সে। তাই শিল্পী হিসেবে তাঁর ক্যারিয়ার হয় মাত্র নয় বছর বয়সেই। ইতালির রেনেসার শিল্পীদের সংস্পর্শে আসেন মাত্র এগারো বছর বয়সে আর ১৬ বছরেই ভর্তি হন প্যারিসের বিখ্যাত Ecole Des Beaux Art এ। এখানেই মাত্র বিশ বছর বয়সে অমৃতা তাঁর ‘Young Girls’ ছবির জন্য অ্যাকাডেমি পদক এবং ফ্রান্সের গ্র্যান্ড সেলনের সদস্য নির্বাচিত হন। এতো কম বয়সে গ্র্যান্ড সেলনের সদস্য হওয়া এখনো একটি অনন্য রেকর্ড এবং এই কৃতিত্বে এশিয়দের মাঝেও তিনি প্রথম ও একমাত্র।

যদিও ১৯৩৪ সালে আবার তিনি একদম স্থায়ী হয়ে ফিরে আসেন শিমলায়। দেশিয় ঐতিহ্যের প্রতি টান আর ব্যক্তিগত জীবনে পাশ্চাত্যের ধ্যান-ধারণা নানা বর্ণে ধরা দিয়েছে তাঁর ছবিতে। বোহেমিয়ান স্বভাবের অমৃতা ১৯৩৬ সালের দিকে ভারতের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে আর পাহাড়ি এলাকাগুলি ঘুরে দেখেছেন।

বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে এক্সপেন্সিভ চিত্রশিল্পী হলেও অমৃতার শিল্পীজীবন কেটেছে অগুরুত্বপূর্ণ এক অখ্যাত শিল্পী হিসেবে। তাঁর ভাগ্য খানিকটা ডাচ মাস্টার ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ এর মতন। বেঁচে থাকতে ভ্যান গঘ যেমন দুইয়ের অধিক চিত্রকর্ম বিক্রি করতে পারেননি তেমনি অমৃতাও শিল্পী হিসেবে খুব কমই সমাদৃত হয়েছেন জীবদ্দশায়।

১৯৪১ সালের ৫ ডিসেম্বরই মাত্র ঊনত্রিশ বছর বয়সে অমৃতা মারা যান জরায়ুর রক্তপাতজনিত ইনফেকশানে। স্বামী ডাক্তার ভিক্টর ইগান অমৃতা’র গর্ভপাত ঘটাতে যান, যাতে ঘটে এই বিপত্তি।

আর্ট শিক্ষক বরিস টেজলস্কির সাথে লিভ টুগেদার, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সাথে গোপন সম্পর্ক, বান্ধবী মেরি লুইস চেনাসির সঙ্গে লেসবিয়ান সম্পর্ক, ব্রিটিশ যুবক ওয়াল্টার কলিন, আকবরপুরের নবাব ইউসুফ আলী খান বা বিখ্যাত ইংরেজ সাংবাদিক ম্যালকম মুগরিজসহ অনেকের সঙ্গে লিভ টুগেদারে নানাসময়ে তিনি একাধিকবার গর্ভবতী হয়ে পড়েন। স্বামী ভিক্টর ইগান একাধিকবার তাঁর গর্ভপাত ঘটান, এমনকি ইগানের সঙ্গে বিয়ের আগেও ইগানকে তা করতে হয়েছে একাধিকবার।

অমৃতা ছিলেন পুরোপুরি প্রথাবিরোধী একজন শিল্পী। ব্যক্তিগত জীবনে ও শিল্পীজীবনে কখনোই তিনি কোনো প্রথার ধার ধারেননি। তাঁর ন্যুড পেইন্টিঙের কানায় কানায় পূর্ণ আছে যৌনতা আর জীবনের বর্ণছটা। কয়েক বছর আগে ব্রিটেনের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় গার্ডিয়ান পত্রিকা তাঁকে নিয়ে লিখেছে ‘The line of beauty of Amrita’ নামের এক প্রবন্ধ।

অমৃতা শেরগিল ১৯১৩ সালের আজকের দিনে (৩০ জানু) হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে জন্মগ্রহণ করেন।

More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.