Press "Enter" to skip to content

অমরেশ পুরি মুম্বাই চলে আসেন নায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। তবে প্রথম অডিশনেই ব্যর্থ হন। স্টিভেন স্পিলবার্গের প্রিয় অভিনেতা ছিলেন……..

Spread the love

বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, বহু বছর পেরিয়ে গেছে ভারতের চলচ্চিত্রশিল্প। এখন তো দাপটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রভাব ফেলছে বলিউড। এখন যদি জানতে চাওয়া হয়, বলিউডের সেরা ভিলেন কে? সম্ভবত বেশির ভাগ দর্শক ভোট দেবেন অমরেশ পুরিকে। কারনাওয়ান শাহর লালা নিহার চান্দ পুরি আর ভেদ কাউরের ঘরে তিন ভাই ও এক বোনের পর জন্ম হয় অমরেশের। বাবা নাম রাখেন অমরেশ, পুরো নাম অমরেশলাল পুরি। অমরেশ পুরি মুম্বাই চলে আসেন নায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। তবে প্রথম অডিশনেই ব্যর্থ হন। নিরুপায় হয়ে জীবিকা উপার্জনে এক ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চাকরি নেন। তবে অভিনয়ের নেশা তাঁর মধ্যে ঢুকে যায়। তাই পৃথ্বী থিয়েটারে কর্মী হিসেবে যোগ দেন। বিখ্যাত নাট্যকার সত্যদেব দুবের অনেক নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

১৯৭৯ সালে অর্জন করেন সংগীত-নাটক একাডেমি অ্যাওয়ার্ড। মঞ্চের জনপ্রিয়তা তাঁকে টিভির বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের সুযোগ করে দেয়। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে রুপালি পর্দায় নিজের আসন গড়ে নেন অমরেশ। শুরুটা হয়েছিল মারাঠি চলচ্চিত্রে, ‘শান্তাতা! কোর্ট চালু আহে’ ছবিতে তিনি রেলস্টেশনের এক অন্ধ ভিখারির ভূমিকায় অভিনয় করেন, লোকটি গান গেয়ে রোজগার করতেন। তাঁর প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘রেশমা অউর শেরা’। যদিও ‘রেশমা অউর শেরা’ অমরেশ পুরির প্রথম হিন্দি ছবি, কিন্তু তাঁর প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবি ‘প্রেম পূজারি’ (১৯৭০)। ‘রেশমা অউর শেরা’ মুক্তি পায় তার এক বছর পর, ১৯৭১ সালে। পরে কেবল হিন্দি নয়, মারাঠি, কানাড়া, তামিল, তেলেগু, মালয়ালম ও পাঞ্জাবি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে চার শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এই গুণী অভিনেতার দক্ষতা শুধু ভারতের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, হলিউডের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা স্টিভেন স্পিলবার্গ তাঁর ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য টেম্পল অব ডুম’ সিনেমায় অমরেশ পুরিকে প্রধান ভিলেন চরিত্র ‘মোলা রাম’ হিসেবে নেন। জানা গেছে, প্রথমে ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স’-এ অভিনয়ের জন্য রাজি হননি অমরেশ। পরে অ্যাটেনবরোর অনুরোধে রাজি হন। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য মাথা কামিয়ে ফেলতে হয়েছিল অমরেশ পুরিকে। পরে তার এই টেকো মাথার স্টাইল হিন্দি সিনেমায় এতটাই জনপ্রিয় হয় যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই স্টাইল ধরে রাখেন তিনি। স্টিভেন স্পিলবার্গের প্রিয় অভিনেতা ছিলেন অমরেশ পুরি। তাঁর সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে অস্কারজয়ী এই নির্মাতা বলেছেন, ‘আমার সবচেয়ে প্রিয় খল চরিত্রের অভিনেতা অমরেশ পুরি। পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া সর্বকালের সব খলনায়কের মধ্যে তিনিই সেরা, তাঁর মতো কেউ আসবে না।’

রিচার্ড অ্যাটেনবরোর কালজয়ী সিনেমা ‘গান্ধী’তেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ব্যতিক্রম কণ্ঠ আর বিশেষ দৃশ্যে কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসা বড় বড় চোখ— খুব সহজেই আলাদা করা যায় পুরিকে। যিনি হিন্দি ছবির খলনায়কের সংজ্ঞা বদলে দেন। জন্ম দেন ‘মোগাম্বো খুশ হুয়ে’ বা ‘আব সামঝোগে পাশা কি ভাষা’র মতো কালজয়ী সংলাপ আর চরিত্র।অমরেশ পুরির সবচেয়ে সাড়া জাগানো চরিত্র শেখর কাপুরের ১৯৮৭ সালের চলচ্চিত্র ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’তে ‘মোগাম্বো’। এ ছবিতে তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় সংলাপ ‘মোগাম্বো খুশ হুয়ে’। এটি আজ পর্যন্ত হিন্দি ছবির অন্যতম জনপ্রিয় সংলাপ। অনেকের মতে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ছবির মোগাম্বো চরিত্রটি যেন তাঁকে মাথায় রেখেই তৈরি করেন পরিচালক শেখর কাপুর। ‘আরব্য রজনী’-র গল্প অবলম্বনে ১৯৯১ সালে তৈরি হয় ‘আজুবা’ ছবিটি। সেখানে দুষ্টু উজিরের চরিত্রে অভিনয় করেন অমরেশ পুরি। বাস্তব-অবাস্তব ঘটনার মিশেলে এক রোমাঞ্চকর ছবি ছিল ১৯৮৬ সালের হিন্দি ছবি ‘নাগিনা’। ভৈরবনাথ নামে এক সাধকের চরিত্রে অসামান্য অভিনয় করেন অমরেশ পুরি।যদিও খলনায়কের চরিত্রেই তাঁকে বেশি দেখা গেছে, অমরেশ পুরি ইতিবাচক অনেক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘যা সিমরান যা…’ । ১৯৯৫ সালে বক্স অফিসে সর্বোচ্চ আয় করা ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়ে লে যায়েঙ্গে’ ছবির কথা নিশ্চয় মনে আছে? যেখানে জনপ্রিয় এই খলনায়ক আদ্যোপান্ত এক ভারতীয় পারিবারিক ব্যক্তিত্ব। যিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও অটুট রেখেছে তার ভারতীয় সংস্কৃতি— এমনই এক বাবার চরিত্র ছিল বলদেব সিং চৌধুরীর।

কাজলের বাবা হিসেবে অসাধারণ অভিনয় করেন অমরেশ পুরি। চলচ্চিত্র শেষে তাঁর সংলাপটি রীতিমতো স্লোগান হয়ে যায়, ‘যা সিমরান যা!’ ১৯৯৭ সালের ‘পরদেশ’ ছবিতে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ীর চরিত্রে তাঁকে দেখা গেছে।

ভারতীয় সেনার এক অপসারিত কর্মী, কর্নেল কেবল কৃষণ পুরির চরিত্রে তাঁকে দেখা গেছে ‘চায়না গেট’ ছবিতে। অমরেশ পুরি ছাড়া এই ছবিতে ছিলেন আরও ১০ জন প্রখ্যাত অভিনেতা।

দক্ষিণ ভারতের প্রখ্যাত পরিচালক প্রিয়দর্শনের মালয়ালম ছবি ‘কিলুক্কম’-এর হিন্দি রিমেক ‘মুসকুরাহট’। ১৯৯২ সালের এই ছবিতে এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের ভূমিকায় দেখা যায় এই অভিনেতাকে।

অমরেশ পুরি চারবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছেন। প্রথম জিতেছেন ১৯৮৬ সালে, ‘মেরি জং’ ছবির জন্য। এরপর ‘ঘাতক’ (১৯৯৬) ও ‘ভিরাসাত’ (১৯৯৭) ছবির জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন।

তবে ২০০২ সালে ‘গাদার: এক প্রেমকথা’ ছবির জন্য তিনি এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি দু’বার স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস পেয়েছেন।

২০০৫ সালের ১২ জানুয়ারি ৭২ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে তিনি প্রয়াত হন।

অমরেশ পুরি ১৯৩২ সালের ২২ জুন পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলার তেহশিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.