নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪: কিছু কিছু রহস্য যেন রহস্যই থেকে যায় যতক্ষণ না সঠিক লোকের চোখে পড়ে। জামশেদপুরের ২১ বছর বয়সী সুফিয়ান আলীর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ছিল সেরকমই। তবে তার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন অসুস্থতা আর মেডিক্যাল ক্ষেত্রে অসম্ভব পারদর্শিতার নিদর্শন দেখা গেল। দুই বছর আগে খুব কফের সমস্যা হতে থাকে তার, কিছু সময় পর রক্ত পড়তে থাকে কফের সাথে।
বিভিন্ন ইএনটি (ENT) বিশেষজ্ঞর কাছে যান তিনি। তারা বেশ কিছু ওষুধ দেন, যার জন্য অস্থায়ী ভাবে রক্তপাত বন্ধ হয়। তবে প্রতি ৫-৬ মাস অন্তর কফ ফিরে আসছিল। গত মাসে কফ অনেকটাই বেড়ে যায় এবং তার সাথে মাঝে মাঝেই জ্বর আর ওজন কমা লক্ষ করা যায়। তখন তাকে মনিপাল হসপিটাল ব্রডওয়েতে যাওয়ার কথা বলা হয়, যেখানে ডঃ অপর্ণা চ্যাটার্জি, অ্যাসোসিয়েট কনসালটেন্ট, রেসপিরেটরি মেডিসিন, মনিপাল হসপিটাল, ব্রডওয়ের অধীনে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। উপসর্গ দেখে শুরুতে বোঝাই যায়নি, যতক্ষণ না ছুঁচলো ধাতব স্প্রিংয়ের অস্তিত্ব – যা চোখে পড়েনি বা জানাও যায়নি আগে, ধরা পড়ল শেষমেশ শ্বাসনালীতে। এই ধাতব বস্তু পাওয়া গিয়েছিল ফুসফুসের বাম সাবকারিনাল (subcarinal) স্থানে – বুকের নীচের দিকে যেখানে শ্বাসনালী ছড়িয়ে যায় এবং ফুসফুসের সাথে যুক্ত হয়।
শুরুতে ব্রনকষ্কপি আর তার সাথে এন্ডব্রনকিয়াল আল্ট্রা সাউন্ড (EBUS) পরিকল্পনা করা হয়েছিল এটা ভেবে যে রোগীর উপসর্গ অনেকটাই যক্ষ্মা বা টিউবারকুলোসিসের মত। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে ফুসফুসের ভেতরের ছবি তৈরি হয় আর তার আশপাশের আর সবটাই সম্ভব হয় শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে। ব্রনকস্কোপের মাধ্যমে ঢোকানো হয় (একটি সরু, ফ্লেক্সিবল টিউব) শ্বাসনালীতে ; এই পদ্ধতির মাধ্যমে ডাক্তাররা ফুসফুসের আশপাশের টিস্যু দেখা সম্ভব হয়। এর ফলে অনেক কিছু বোঝা সম্ভব হয়, একদিকে যেমন সংক্রমণ বোঝার জন্য লসিকা গ্রন্থি বা ক্যান্সার হয়েছে কিনা সেটাও বোঝা সম্ভব। শুরুতে যে এক্সরে করা হয়েছিল, সেখান থেকে কোন উপসংহারে আসা যায়নি। এরপর উচ্চ রেজোলিউশনের সিটি (CT) এইচআরসিটি (HRCT) থোরাক্স স্ক্যান করার ধরা পড়ে একটি দুই সেন্টিমিটার লম্বা ধাতব স্প্রিংয়ের উপস্থিতি।
রোগী এবং তার পরিবার, উভয়েই এই ধাতব বস্তুর উপস্থিতির ব্যাপারে কোন রকম আলোকপাত করতে পারেননি। এর ফলে মনিপাল হসপিটালের মেডিক্যাল টিমের কাছে কঠিন ধাঁধা ছিল। শুধু তাই নয়, কিভাবে বার করা হবে সেটিও বড় প্রশ্ন ছিল।
ডঃ অপর্ণা চ্যাটার্জি, অ্যাসোসিয়েট কনসালটেন্ট, রেসপিরেটরি মেডিসিন, মনিপাল হসপিটাল, ব্রডওয়ে, যিনি পুরো পদ্ধতির ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন, জানান,” এটি কোন সাধারণ কেস নয়। যখন বাইরের কিছু আমাদের ফুসফুসের নিচের দিকের অংশে কোন কারণে আসে বা আঘাত করে, বিশেষ করে যখন আড়াআড়ি ভাবে সাধারণত যে জায়গায় আঘাত লাগে এরকম না হয়, তখন ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতিতে এগিয়ে যাওয়া বেশ ঝুঁকির হয়ে পড়ে। তখন প্রয়োজন হয় খুব যত্ন সহকারে অ্যানগুলেশন এবং একাধিক বার র্যাট টুথ (rat- tooth) ফরসেপসের দ্বারা ওই জায়গা থেকে বস্তুটি সরানো এবং সতর্কতার সাথে বস্তুটি শরীর থেকে বাদ দেওয়া। এই ক্ষেত্রে আমরা সাফল্যের সাথে ধাতব বস্তুটি বার করে শরীর থেকে বাদ দিতে সফল হয়েছি খুব দক্ষতার সাথে এগিয়ে। খুব অল্প রক্তপাত হয়েছে যা সামলানো গিয়েছে, বিশেষ করে রোগীর স্বার্থের সাথে জড়িয়ে রয়েছে ব্যাপারটা যখন।”
পুরো বিষয়টি নিয়ে রোগী সুফিয়ান আলী বলেন,” আমার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না যে আমার এরকম কিছু হতে পারে। এই অভিজ্ঞতা ভয়ানক বললেও কম নয়, যা জীবনকে থমকে দিয়েছিল। গত মাসে যখন আমার উপসর্গ গুলো আরো খারাপ হতে আরম্ভ করে, তখন আমাকে মনিপাল হসপিটাল ব্রডওয়েতে রেফার করা হয়, যেখানে ডাক্তাররা আমার এই অবিরাম রক্তপাতের কারণ বার করতে পারেন। ছুঁচ জাতীয় কোন জিনিস শ্বাসনালীতে আটকে গিয়েছিল। বাইরের জিনিস, যা সম্পূর্ণ অগোচরে ছিল এবং এর কারণেই গত দুই বছর ধরে এত কষ্ট হচ্ছিল। শেষমেশ ডাক্তারদের পারদর্শিতার কারণেই এই ছুঁচ জাতীয় জিনিস বার করা সম্ভব হয়েছে।”
গত ২৮ শে নভেম্বর ২০২৪ যখন তাকে ডিসচার্জ করা হয়, তখন তার অবস্থা অনেকটাই ভালো ছিল এবং আগে যেই সমস্যা থেকে অনেকটাই বিরত করেছিল, তার থেকে মুক্তি পেয়েছিল। তবে যক্ষ্মা বা টিউবারকুলোসিস ধরা পড়ার কারণে বর্তমানে চিকিৎসা চলছে ডঃ দেবরাজ যশ, রেসপিরেটরি মেডিসিন, মনিপাল হসপিটালের অধীনে। পরবর্তীকালে সুফিয়ান আলীকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হবে যাতে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফেরার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা না হয়।
Be First to Comment