Press "Enter" to skip to content

অনুপকুমার নায়ক! ছবি চলবে না। শেষে শান্তারাম সাহস করে পলাতক ছবির প্রযোজনায় এগিয়ে আসেন, বাকিটা ইতিহাস………..

Spread the love

————-জন্মদিনে স্মরণঃ অনুপ কুমার——— বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, ‘আমার মনে হচ্ছে শিল্পী হিসেবে আমি মরে যাচ্ছি, মাথার উপরে দু’হাত পরিমাণ জল, নিঃশ্বাস নিতে পারছি না, বেরুতে চাইছি বদ্ধ জায়গা থেকে, কিন্তু কাউকে তা বলতে পারছি না…।’ এমনই একটা বদ্ধ অবস্থা থেকে ‘পলাতক’ হয়ে মুক্তি পেয়েছিলেন অনুপকুমার। সেটা হয়েছিল তরুণ মজুমদারের হাতে। ওই আত্মজীবনীতেই, অনুপকুমার লিখছেন— ‘আমি কাজ শেষ করে ওর ঘরে বসে বলতে শুরু করলাম যে দ্যাখো, আমার প্রবলেম হয়েছে যে আমি অনুপকুমার হয়ে গেছি। কারো কাছে গিয়ে আমি আজ কাজ চাইতে পারি না। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি মারা যাচ্ছি। আমার মনে হয়েছে তোমাকে বলা যায় তাই বলছি তুমি আমাকে এর থেকে বাঁচাতে পারো। আমার এই স্ট্যাম্পটা মুছে দাও। ছোট রোল হোক, তবু যে কোনও একটা রোল দাও যেখানে ওই হাসানোর কোনো দায়িত্ব থাকবে না।’ ছোট রোল নয়, রীতিমতো নায়ক। তরুণ মজুমদারের ‘পলাতক’ ছবিতে। কিন্তু কলকাতার প্রযোজকেরা বেঁকে বসেছিলেন। অনুপকুমার নায়ক! ছবি চলবে না। শেষে শান্তারাম সাহস করে এগিয়ে আসেন। সেই ছবিতেই, অনুপকুমারের নিজেরই কথায়— ‘আমার একটা উত্তরণ হয়, একজন নতুন অনুপকুমার তৈরি হয়।’ সেটা ১৯৬৩ সাল।

তারও পঁচিশ বছর আগে ১৯৩৮ সাল নাগাদ অভিনয় জীবনের শুরু তাঁর। ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে ডিজি-র ‘হালবাংলা’ ছবিতেই প্রথম অভিনয়। সেই আট বছর বয়সের একদিন থেকে, “সে সময় ‘হালবাংলা’ বলে একটা ছবি হচ্ছিল, ধীরেন গাঙ্গুলী— যাঁকে আমরা ‘ডিজি’ বলে জানি, দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারও পেয়েছেন, তিনি একটা ছবি করবেন, তাতে তাঁর অনেকগুলি ছেলেমেয়ে দরকার। তা এখন যেমন ছেলেমেয়ে ইচ্ছে করলেই পাওয়া যায়, তখন সেই অবস্থাটা ছিল না। আর বেশ ভদ্র চেহারার ছেলে দরকার, সেজন্যে যারা কাজের সঙ্গে জড়িয়েছিল তাদেরকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কেন জানি বাবা আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন সেটা আমার মনে আছে এবং হয়ে যাবার পর সকলে খুব মজা পেয়েছিল। পিঠ চাপড়ে বলেছিল খুব সুন্দর। এই হচ্ছে আমার প্রথম জনসাধারণের কাছে চেহারা দেখানো।… এর পরে আমার সঙ্গে আর এই জগতের কোনওরকম যোগাযোগ বহু দিন ধরে ছিল না।”সেই সময় অনুপকুমারকে পেশাদার থিয়েটারে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর বাবা, সে কালের নামকরা গায়ক-অভিনেতা ধীরেন দাস। ১৯৪২-এ স্টার থিয়েটারে সেই পেশাদার থিয়েটারের জগতে অনুপকুমারের আত্মপ্রকাশ। সেখানেই, ধীরেন দাস তখন সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার এবং অভিনেতা। স্টার-এ নাটক হচ্ছে ‘শ্রীরামচন্দ্র’। লক্ষ্মণের ভূমিকায় অনুপকুমার। সেই অভিজ্ঞতা লিখছেন তিনি— “স্টারে যখন ‘শ্রীরামচন্দ্র’ অভিনীত হচ্ছিল, তখন বাবা অভিনেতা পদটা ছেড়ে সুরকার হিসেবে যুক্ত ছিলেন।

#এটি একটি বিরল ছবি- এক ফ্রেমে রবি ঘোষ, অনুপ কুমার, নিমু ভৌমিক ও চিন্ময় রায়।#

হঠাৎ একদিন শুনলাম বাবা থিয়েটার দেখতে এসেছেন। শুনে আমার মনে হল বাবাকে একটু দেখিয়ে দেওয়া দরকার যে বাবা আমাকে থিয়েটারে এনে ভুল করেননি। সে দিন অন্যান্য দিনের চেয়েও বেশ জোরালো অভিনয় করলাম। বীররসের সঙ্গে বীরদর্পে বিশ্বামিত্রকে প্রায় নস্যাৎ করে দিলাম।” পেশাদার মঞ্চে অভিনয়ের শিক্ষাটা একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল শিশিরকুমার ভাদুড়ীর কাছে, শ্রীরঙ্গমে। শিশিরকুমার প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু থিয়েটারে যে নিজের মতো ইম্প্রোভাইজ করতে পারতেন সিনেমায় তার সুযোগ পাননি সে ভাবে। এই না-পাওয়া বয়ে বেড়িয়েছেন সারা জীবন। তবু সিনেমায় অভিনয়ের প্রথম দিকে তখনও তিনি সেই টাইপ লোক হাসানোর জোয়াল কাঁধে নেওয়া অনুপকুমার হয়ে যাননি। দেবকীকুমার বসুর ডবল ভার্সান ‘চন্দ্রশেখর’ ছবিতে চরিত্রটা ছিল ছোট প্রতাপের। এবং অনুপকুমার লিখছেন— “এরপর থেকে একের পর এক ছবিতে আমি কাজ পেতে শুরু করি এবং কিছু কিছু বেশ ভাল ছবি পেয়েছিলাম যাতে অভিনয় করে আনন্দ পেয়েছি।

কিছু কিছু ট্র্যাজিক রোল ছিল, যেমন ‘বাঁকালেখা’। খুবই ভাল রোল এবং এটাই সম্ভবত আমার সিরিও-কমিক রোলের সূচনা। তারপর ‘সংকল্প’তে নায়ক হওয়ার সুযোগ এল। এরপর উত্তম এল, ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘পথে হল দেরি’ ইত্যাদি ইত্যাদি। উত্তম-সুচিত্রা-অনুপ একটা ব্র্যাকেটের মধ্যে পড়ে গেল। ‘বরযাত্রী’ অবশ্য তার আগে।” তরুণ মজুমদারের সঙ্গে কুড়িটা ছবি, দিলীপ রায়ের ‘অমৃতকুম্ভের সন্ধানে’ অন্য অনুপকুমারকে বার বার দেখা গেলেও শিল্পী হিসেবে মরে যাওয়ার সেই অতৃপ্তির কাঁটাটা ছিলই। নিজেই লিখছেন— ‘আমার কাছে তখন অর্থ উপার্জনটা বিশেষ প্রয়োজনীয় ব্যাপার ছিল। অনেক খরচের দায়িত্ব আমার ওপরে এসে পড়েছিল। কাজেই সিলেক্টেড ছবি করার সুযোগ আমার জীবনে কখনো আসেনি। যদি নিজের ইচ্ছেমতো ছবিতে কাজ করতে পারতাম, তাহলে আমার আজকের পরিচয়টা অন্য এক মাত্রা পেত।’ অনুপ কুমার ছায়াছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন থিয়েটার, যাত্রা এবং নির্দেশনার কাজে। ১৯৬৪সালে BFJA পুরস্কার পান ‘পলাতক’ ছবির শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে। ১৯৮৮ সালে রুপোর পদক গ্রহণ করেছিলেন স্টার থিয়েটার থেকে। পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৮৯ সালে।

শিরোমণি পুরস্কারে ভূষিত হন ১৯৯১ সালে।১৯৯৭ সালে অনুপ কুমার পেলেন শ্রেষ্ঠ পরিচালকের তকমা এবং বাংলা সিনেমার ৫০ বছর উপলক্ষ্যে আবারও BFJA পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি।

১৯৯৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর অনুপ কুমার ৬৮ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

অনুপ কুমার (দাস) ১৯৩০ সালের আজকের দিনে (১৭ জুন) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.