বেবী চক্রবর্তী : ১৫ জুলাই, ২০২০। ২০১৬ সাল নাগাদ সারা পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলাতে প্রায় একযোগে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা মধ্য দিয়ে নিয়োগ করা হয়েছিল গ্রামীন সম্পদ কর্মীদের যাদের পোশাকি নাম ভিআরপি। জেলা সামাজিক নিরীক্ষা দপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত গুলিতে সামাজিক নিরীক্ষার কাজে লাগানো হয় তাদের। তারা মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের এম জি এন আর ই জি এ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, জাতীয় সামাজিক সহায়তা প্রকল্প, এই তিনটি প্রকল্পের উপরে সামাজিক নিরীক্ষা করে থাকেন। সামাজিক নিরীক্ষার কাজ বছরে দুবার বরাদ্দ থাকলেও তারা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ত্রিপুরা মেঘালয় রাজ্য গুলিতে বছরে ১৫০ দিন সামাজিক নিরীক্ষা করার সুযোগ পান ভি আর পি রা, এবং তাদের বেতন পরিকাঠামো ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা মাসে। কিন্তু বাংলায় সেই নিয়ম নীতি মানা হয় না বলে অভিযোগ করেন সারাবাংলা গ্রামীন সম্পদ কর্মী সংগঠনের রাজ্য সভাপতি মিজানুর রহমান। জেলা সামাজিক নিরীক্ষা দপ্তর থেকে ভি আর পি রা বছরে মাত্র ৭২৩০ টাকা বেতন পান। এ নিয়ে তারা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বারবার অনুরোধ করেন। ফলে ২০১৮ সাল নাগাদ রাজ্যে যখন ব্যাপকহারে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল তখন তাদের দিয়ে ডেঙ্গু নিধন কর্মসূচি তে সংযুক্ত করানো হয় বলে জানান তিনি ।
১০/৫/২০১৮ তে একটা বিজ্ঞপ্তির মধ্য দিয়ে বছরে মাত্র ৬০ দিন Vector-Borne Disease Control (VBDC) এর কাজ দিয়ে দায় সারেন সরকার।
১৫০ টাকায় বছরে মাত্র ৬০দিন কাজ করে সংসার নির্বাহ করা দুর্বিষহ। তাই তারা সারাবাংলা গ্রামীন সম্পদ কর্মী সংগঠন নামক সংগঠন তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রী দ্বারস্থ হন। সংগঠনের সম্পাদক হরিসাধন রুইদাস এর দাবি তারা ব্যাপকভাবে সংঘটিত হয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাদের দুঃখ-দুর্দশার ছবি তুলে ধরেন। সরকারি কর্মচারী মর্যাদা, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সহ বর্ধিত কর্মের দাবি নিয়ে কলকাতার বুকে তিন-তিনবার শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেন। ২০১৯সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারি কলকাতার রামলীলা ময়দান থেকে প্রায়ই ২৫০০০ গ্রামীন সম্পদ কর্মী একযোগে পদব্রজে এগিয়ে যান নবান্ন অভিমুখে। সে সময় মুখ্যমন্ত্রী তাদের কার্যপ্রণালী কে মূল্যায়ন করে, ও দৈনন্দিন জীবনে অসহায়তার কথা ভেবে বছরে ২৪০ দিন কাজের সুযোগ করে দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ১৭৫ টাকায় এক মাস কাজ করে মাহিনা জোটে মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা, যা দিয়ে সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরানোর উপক্রম। বিগত লোকসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী তাদের কথা দেন ভি আর পি দের একটা সিস্টেমের মধ্যে এনে মাস মাহিনা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু অদ্যাবধি সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ আজও হয় নি বলে দাবি করেন সম্পদ কর্মী সংগঠনের রাজ্য প্রতিনিধি শেখ রাজু আলী সহ অমিত সরকার, তারক কর্মকার, লক্ষীকান্ত দত্ত, রহমত উল্লাহ খান, ইলিয়াস আলমরা। বর্তমানে করোনার আবহে ইতিমধ্যেই তারা ৭ই জুলাই মুখ্যমন্ত্রী কে ইমেইল এর মধ্য দিয়ে চিঠি দিয়েছেন এবং সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে দাবি করেন সম্পদ কর্মী সুজা উদ্দিন আহমেদ।
চিঠি দিয়ে সম্পদ কর্মীরা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে আবেদনও রেখেছেন বলে জানা যায়। আগামীদিন ভি আর পি দের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলে লকডাউন শেষ হলেই আবারও কলকাতার বুকে বৃহত্তর আন্দোলন সহ অনশনের মতো কঠিন পথ বেছে নেবেন বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যম কে জানানো হয়।
Be First to Comment