সঙ্গীতা চৌধুরী : কলকাতা, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১। গত ২৯শে আগস্ট ‘মনোস্কোপ’ এবং ‘এস আর এস সলিউশন’-এর যৌথ উদ্যোগে ‘রেইনবো রাইটস ‘- নামে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল দমদম সন্নিহিত মলপল্লী ক্লাবে। সন্ধ্যা সাতটায় অনুষ্ঠানটির সূচনা হয়। একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়। এর লক্ষ্য ছিল প্রচলিত বৈষম্য দূর করা ও LGBTQ এবং সমস্ত মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি বিষয়ে আলোচনা করা।
গত বছর লকডাউনের সময় ‘মনোস্কোপ’-এর কর্নধার সোমদত্তা ব্যানার্জি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার জন্য একটি দল গঠন করেন। সেই দলের সদস্য-সদস্যরা হলেন ঋষিকা পাল, সৃজিতা শীল, মেহনাজ হাসমী, শ্রুতি চোবে ও সাগ্নিক ব্যানার্জি। তাদের নিয়ে তিনি করোনাকালে মানসিক বিভ্রান্ত মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন।
সেদিন সেই বিশেষ মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন অনেক বিশিষ্ট মানুষেরা, যেমন- ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত ( সমাজ কর্মী) , দেবিকা রায় (২১নং ওয়ার্ড কো – অর্ডিনেটর) , সুপ্রতিক ব্যানার্জি ( এক্স ক্লাব প্রেসিডেন্ট) ,শম্ভু নন্দী ( সেক্রেটারি) ,শান্তনু সেনগুপ্ত ( ক্লাব প্রেসিডেন্ট ) । এদের সহযোগিতা ছাড়া এই অনুষ্ঠানটি সুন্দর ভাবে সম্পূর্ণ করা সম্ভব হতো না।’এস আর এস সলিউশন’-এর পক্ষ থেকে ছিলেন তিস্তা দাস, দীপন চক্রবর্তী , মৈত্রী মুখার্জি( সমাজ কর্মী ও ট্রান্স জেন্ডার ব্যক্তি) , দেবযানী দাস ( কাউন্সিলর ও শিক্ষাবিদ) ডাক্তার নরোত্তম হালদার ( মনোরোগ বিশেষজ্ঞ) ।
এই অতিমারির সময় অনুষ্ঠানে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের গুরুত্ব বোঝানো হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি কোভিড বিধি মেনে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে। মনোরঞ্জনের কথা মাথায় রেখে একটা সুন্দর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের একটা বড় অংশ জুড়ে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা হয়। এবং অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে ৩০ জন থার্ড জেন্ডার ব্যক্তিকে রোজকার প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরনের মাধ্যমে। এই কঠিন সময়ে ট্রান্স জেন্ডার মানুষদের পাশে থেকে তাদের মানসিক ভাবে সহযোগিতা করাই এই অনুষ্ঠানের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল।
এই অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে ‘মনোস্কোপ’ -এর কর্নধার সোমদত্তা ব্যানার্জি বলেন, ” এই LGBTQ কমিউনিটি বা ট্রান্স জেন্ডার , যাদের আমরা থার্ড জেন্ডার বলি এরা এখনও আমাদের সমাজে কিন্তু সবরকম সুবিধা পাচ্ছে না । এরা সমাজে নিজেদের জায়গা তৈরির জন্য সমানে লড়াই করে চলেছেন। সরকার থেকে এদের নানা রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে এরা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত। এই অতিমারি পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষেরই অনেকের চাকরি চলে গেছে, আর এদের অবস্থা তো আরও খারাপ হয়ে গেছে। কারন ওদের কোন কাজ নেই তাই আর্থিক অবস্থা নিদারুণ। ওরা এখন ঠিকমতো খেতেও পারছেন না। তাই ওদের কথা ভেবেই আমরা এই কমিউনিটির মানুষদের পাশে থেকে যদি কিছুটা সাহায্য করা যায় সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে ছিলাম। রোজকার প্রয়োজনীয় বেশ কিছু সামগ্রী(মাস্ক, স্যানিটাইজার, সাবান, তেল, শ্যাম্পু, চা পাতা, বিস্কুট, ম্যাগি ইত্যাদি) ৩০ জন ট্রান্স জেন্ডার মানুষের হাতে তুলে দিই । তাছাড়া তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে সে বিষয়েও আলোচনা করি। যেহেতু যারা সেক্স চেঞ্জ করে , তাদেরকে সমাজ মেনে নেয় না, তাদের একটা ট্রমার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাই তাদের কিছুটা আনন্দ দানের জন্য আমরা একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করি। তবে এই অতিমারিতে সব মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকও আলোকপাত করা হয় ।”
‘মনোস্কোপ’ ও ‘এস আর এস সলিউশন ‘-এর এরকম একটি সামাজিক প্রয়াস সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
Be First to Comment